গাংনী নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম :
মেহেরপুরে গাংনীতে ওএমএস কার্ডের তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংশোধনের নির্দেশনা দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমানকে মামলার হুমকি দিয়েছেন পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম। ২৮.০৫.২০২০ ইং বৃহস্পতিবার রাত ৮ টা ৩২ মিনিটের সময় তার ফেসবুক পেইজে তিনি অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ৪০ মিনিটের লাইভ করেন। ইতোমধ্যে পৌর মেয়রের ফেসবুক লাইভটি ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন সহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে।
জানা গেছে,করোনা সংক্রমনের কারনে সরকার সারা দেশের ন্যায় গাংনী পৌরসভার ১২শ’ অসচ্ছল মানুষের ওএমএস চাল প্রদানের জন্য তালিকা তৈরির নির্দেশনা প্রদান করেন। তালিকায় অসচ্ছল ব্যক্তিদের ১০ টাকা কেজি দরে প্রতি মাসে ২০ কেজি চাউল দেয়া হবে। সেই তালিকার তদন্ত প্রতিবেদনে ১০৯ জনের সচ্ছল ও ঠিকানা বিহীন নাম থাকায় গত ১৮ মে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে সংশোধনের নির্দেশনা দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান।
এ ঘটনায় গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম তার ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমানের বিরুদ্ধে আরসিসি পাইপ,জলাতংকের টিকা না দেয়া ও পুকুরে মাছ না ছেড়ে বিল উত্তোলন সহ বিভিন্ন কাজের নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন। এসময় পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমানের ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে নানা সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ওএমএস তালিকায় কোন অনিয়ম হয়নি তদন্ত ছাড়াই সচ্ছল ও ঠিকানা বিহীন বলা হয়েছে। অনিয়মনের বিষয় গুলো তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম বলেই আমার সম্মানহানি করা হয়েছে। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতের দরজায় হাজির করবো।
এছাড়া বাড়িতে বসে অফিস করার অভিযোগ তুলে তালিকা যাচাই বাছাই কারীদের নাম প্রকাশের আহবান জানান। তিনি বলেন আমি চাউল চুরি করতে মেয়র হয়নি বরং হাজারো জনতাকে নিজের টাকা দিয়ে চাউল দিই।
সদ্য বিদায়ী গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান বলেন,আরসিসি পাইপ সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সময় এডিবি থেকে প্রকল্প নিয়ে তিনিই বাস্তবায়ন করেছেন। তাছাড়া এডিবি থেকে ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ দেয়া হয় পৌরসভাকে নয়। জলাতংকের টিকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে তার সকল ডকুমেন্ট অফিসে সংরক্ষিত রয়েছে। মাছের বিষয়টা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে খোঁজ নিয়ে সঠিক তথ্য জানা যাবে। এছাড়া সহকারী কমিশনার ভুমিকে দিয়ে পৌর এলাকায় তদন্ত করা হয়েছে সেখানে ১০৯ জনের সচ্ছল ও ঠিকানা বিহীন পাওয়া যায়। এছাড়া গাংনী উপজেলার দুস্থ অসহায় ২২ হাজার পরিবারের তালিকা প্রেরন করা হয়েছে সেই তালিকা ট্যাগ অফিসারকে দিয়ে কার্ড যাচাই বাছাই করা হয়েছে। এছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী খাদ্য কমর্কর্তা কার্ড ইস্যুকারী একারনে তাকেই তালিকা সংশোধনের জন্য বলে আমি আমার দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করেছি। এখানে মেয়রের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এছাড়া জেলা প্রশাসককে ২৭ তারিখে এ বিষয়ে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তালিকা যাচাই করে দেখা যায় তিনতলা বাড়ি গাড়ির মালিকদের কার্ড দেয়া হয়েছে। এমনকি দুজন কাউন্সিলরের স্বামীকে তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। যাদের একজনের তিনতলা বাড়ি আরেকজন পৌরসভার নিয়মিত কর্মচারী। এছাড়া গার্মেন্টস মালিক,মার্কেট মালিক সহ পৌরসভার নিয়মিত সচ্চল কর্মচারীকে ওএমএসের তালিকায় অন্তভুক্ত করা হয়েছে। কিছু সংখ্যক বাড়িতে সরেজমিন তদন্ত করতে গেলে এ ঘটনার অনিয়মের বিষয়টি সত্যতা পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন,পৌর মেয়র তার ফেসবুক লাইভে আক্রমণাতœক ভাষায় আমার পারিবারিক,জেন্ডার ও সরকারী কাজের নানা সমালোচনা করতে গিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। আমি দাপ্তরিক কর্মকান্ডে ভুলত্রæটি পরিলক্ষিত হলে আমার উর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে পারে। কিন্তু তা না করে ফেসবুক লাইভে মিথ্যাচার করা হয়েছে। এসময় বিষয়ে সরকারের উদ্ধর্ত্বন মহলকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন উপজেলার ২২ হাজার অসচ্ছল পরিবারের তালিকার মধ্যে পৌর এলাকার ৪ হাজার জনের নামের তালিকা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যালয়ে প্রেরন করা হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা সেখান থেকেই নেয়া হয়। তিনি আরো বলেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পুবেই তার বদলি হলেও এ বিষয় বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে। মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো: আতাউল গনী বলেন,এখন পর্যন্ত লিখিত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লিখিত পেলে পরবর্তীতে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য : গত ১৮ মে সোমবার দুপরে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তার শেষ কর্ম দিবস ছিলো।
১ কমেন্ট
কোন সৎ মানুষ এসব চোরদের জন্য এখানে থাকতে পারেনা। যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে এই চোরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। শিক্ষিত সৎ মানুষের সেবা এই এলাকার চোরদের জন্য বারবার বিঘ্নিত হচ্ছে।