গাংনী নিউজ টােয়েন্টিফোর ডটকম :
মেহেরপুরের গাংনীতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সভাপতি সাবেক যুবলীগ নেতা শেখ আনিসুজ্জামান লুইসের বিরুদ্ধে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টাকা ফেরতের দাবিতে (১৫ ফেব্রুয়ারী) বুধবার সকাল ১১ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে আটকিয়ে রাখে শিক্ষক কর্মচারীরা।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জুলেখা খাতুন বলেন,২৪ জন শিক্ষক কর্মচারীর কাছ থেকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সভাপতি শেখ আনিসুজ্জামান লুইস কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিদ্যালয়ে জমি ভুয়া দলিল দেখিয়ে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের নামে কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এখন পর্যন্ত বিদ্যালয় এমপিও ভুক্ত তো দুরের কথা বিদ্যালয়ের জন্য জমিক্রয় করা পর্যন্ত হয়নি। একটি ভাড়া বাড়িতে কিছুদিন কার্যক্রম চললেও এখন সেটি বন্ধ রয়েছে। বাধ্য হয়েও শিক্ষক কর্মচারীরা টাকা ফেরত চাইছে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো: বাবুল হোসেন জনি বলেন, শিক্ষক কর্মচারীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে বুধবার সকাল ১১ টায় গাংনী হাসপাতাল বাজার থেকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সভাপতি শেখ আনিসুজ্জামান লুইসকে ধরে এনে গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। সূরহা না হওয়া পর্যন্ত তাকে ছাড়া হবেনা। সে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের জন্য কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে টাকা ফেরত দিতে টালবাহনা শুরু করেছে। তিনি টাকা ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি তার দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবি করেন।
তেরাইল গ্রামের বাসিন্দা সহকারী শিক্ষক লাবনী খাতুন বলেন, শেখ আনিসুজ্জামান লুইসকে তিনি জমি বিক্রি সহ ধরদেনা করে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকাগুলো লুটপাট করেছে।
সহকারী শিক্ষক শারমিন আক্তার শীলা বলেন,মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে শেখ আনিসুজ্জামান লুইস তার কাছ থেকে ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা সহ ২৪জন শিক্ষক কর্মচারী কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এখন টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না চাকুরীও হচ্ছেনা। বয়স শেষ হয়ে গেছে অন্য কোথাও আবেদনের সুযোগও নেই মহাবিপদের মধ্যে পড়েছেন বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
সহকারী শিক্ষক ক্যামেলি খাতুন বলেন,ধারদেনা ও সমিতি থেকে লোন করে শেখ আনিসুজ্জামান লুইসের হাতে ৩ লাখ টাকা তুলে দিয়েছি। এখন টাকা ফেরত না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।
সহকারী শিক্ষক সেলিনা আক্তার বলেন,২০১৫ সালে বাঁশবাড়িয়া গ্রামে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই জমির সমস্যা দেখিয়ে ২০২০ সালের দিকে ফতাইপুর তেলপাম্পের পিছনে একটি ঘরভাড়া করে কিছুদিন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এখন সেটি বন্ধ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু পরিবার ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবে নাম ভাঙ্গিয়ে শুধুমাত্র সাইন বোর্ড ব্যবহার করে তার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা সহ ২৪ শিক্ষক কর্মচারীরর কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শেখ আনিসুজ্জামান লুইসের লুটপাটের সাথে রাঘব বোয়ালরা জড়িত রয়েছে। জড়িতদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবি করে তিনি।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সভাপতি শেখ আনিসুজ্জামান লুইস নিজেকে জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক দাবি করে বলেন,শিক্ষক কর্মচারীর কাছ থেকে কোটি টাকা নয় ৪৬ লাখ টাকা নিয়েছি।
মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক বলেন, সন্ধ্যার পর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সভাপতি শেখ আনিসুজ্জামান লুইসকে সাথে নিয়ে শিক্ষক কর্মচারীরা আমার বাসভবন কার্যালয়ে নিয়ে আসে। এরপর সার্বিক বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সভাপতি শেখ আনিসুজ্জামান লুইস শিক্ষক কর্মচারীদের কাছ থেকে ৬৫ লাখ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। সমুদয় টাকা তিন কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করবে বলে চেক দেওয়ার পাশাপাশি নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে লিখিত দিয়েছে।