গাংনী নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম :
স্থানীয় ব্রডব্যান্ড ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে মেহেরপুর জেলার ইউজাররা ইন্টারনেটে গতি না পাওয়াতে একদিকে যেমন ভার্চুয়াল সামাজিক যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছেনা। আবার অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, কোচিং, সংবাদ সংগ্রহ, কেনাকাটা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। ইন্টারনেট সমস্যার সমাধান করতে জেলা প্রশাসন বিটিআরসি ও ভোক্তা অধিকারকে এগিয়ে আসার আহবান ভুক্তভুগীদের।
করোনার কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন অনেকটাই রুদ্ধ এখন। মানুষের গতিবিধি খুবই সীমিত হয়ে পড়েছে। মানুষ জন পারত পক্ষে সব কাজ বিশেষত যেসব কাজ অনলাইনে করা সম্ভব তা বাড়িতে বসেই সম্পন্ন করার চেষ্টাকরছে, যেমন সামাজিক যোগাযোগ, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, কোচিং, সংবাদ সংগ্রহ, কেনাকাটাইত্যাদি। কিন্তু ইন্টারনেটেরগতির অবস্থা করুন হওয়ায় সব কাজে-কর্মেই ভীষণ ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট আইএসপি(ইন্টারনেটসার্ভিস প্রোভাইডার) এর কাছে বারবার অভিযোগ করে সমস্যার কোনো সুরাহা হচ্ছেনা। তারা সব সময় বলে থাকে, ‘আপনারযন্ত্র/ডিভাইস/সিস্টেম আবার পুনঃচালনা করুন। এতে কখনো কখনো সাময়িক/ক্ষণিকের পরিত্রাণ মিললেও প্রকৃতপক্ষে ফলপ্রসূ কিছু হচ্ছেনা।
করোনা দুর্যোগে ইন্টারনেটের গ্রাহক ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় আইএসপি সেই তুলনায় সরবরাহ করছেনা। কারণ তারা তাদের সক্ষমতার অনেক বেশি ইন্টারনেট সংযোগ দিয়েছে। ফলে একই ইন্টারনেট গতিনির্ধারিত গ্রাহকের তুলনায় অনেক বেশি গ্রাহকদের মধ্যে ভাগাভাগি হওয়ায় গতি ব্যাপক হারে হ্রাসপাচ্ছে। মুজিবনগরের এক কম্পিউটার দোকানি জানান,শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ নেটে কাজ করার জন্য আসলেও ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও নেটের গতি কম থাকার কারনে তাদের সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এদিয়ে প্রায় প্রতিদিনই গ্রহকদের সাথে বাকবিতন্ডার ঘটনাও ঘটছে। তিনি ব্রডব্যান্ড লাইন সরবরাহকারীদের হাত থেকে রক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন।
বিটিসিএল, ম্যাঙ্গো টেলিকম, সামিটকমিউনিকেশন, বাংলাফোন, ভার্গো কামিউনিকেশন, নভো কমআইসিসি, জিওটেল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কম দামে সাব লাইন কিনে ব্যবসা করছেন। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো নেই মাইক্রোটিকরাউটার ২৪ ঘন্টা অন রাখার জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা। ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলে ইউজাররা ইন্টারনেট সুবিধা বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। বাড়িবাকা সীমান্ত মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান- তিনি স্থানীয় কম্পিউটার মেট থেকে মাসিক ৮শ টাকার বিনিময়ে সংযোগ নিয়েছেন ৫এমবিপিএস। প্রতিষ্ঠানটি ব্যান্ড উইথ চুরি করছে বলেই ইন্টারনেটে গতি পাচ্ছেননা। তিনি বলেন ৩শ মিটারের মধ্যে ইন্টারনেটসংযোগ থাকার কথা। কিন্তু ১০ মিটারের বাইরে গেলে সংযোগ থাকেনা। তিনি ভোক্তা অধিকার আইনে প্রশাসনের কাছে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি জানান।
ঢাকার লালমাটিয়া কলেজের শিক্ষার্থী তামান্না জামান জানান-করোনার কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় তিনি মেহেরপুরের বাড়িতে আছেন। জুমের মাধ্যমে অন্য জেলার শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন। কিন্তু মেহেরপুরে ইন্টারনেট সংযোগে গতি না থাকার কারণে ক্লাস করতে না পারাতে তিনি কলেজের অন্য শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে পড়ছেন। মেহেরপুর সরকারি বালক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভির আহমেদ অভিযোগ করেন- কম্পিউটার মেট’ থেকে সংযোগ নিই। ইন্টারনেট গতি না থাকার সংযোগ বাতিল করেছি। ইন্টারনেটে গতি না পাবার কারণে অভিযোগ করলে কম্পিউটার মেট থেকে বলা হয় কম্পিউটারটি অফ করে অন করুন। তাদের কথামতো অফ করে অন করলেই গতি বেড়ে যায় সর্বচ্চ এক ঘন্টার মতো। পরবর্তীতে গতি না পেলে অফ অন করলে গতি বাড়েনা। বিষয়টি রহস্যজনক। এই কারণেইএখন অতিরিক্ত টাকা খরচ করে মডেম ব্যাবহারকরি। এই অফ অন রহস্যর বিষয়ে নেট ব্যবসার সাথে জড়িত একটি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান- স্থানীয় কন্ট্রোল রুমে ম্যানেজি বুলসুইজ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যখন অভিযোগ করা হয় তখন কম্পিউটার অফ করে অন করতে বলা হয়। এই সময় এক ঘন্টার জন্য চাহিদার এমবিপিএস দেয়া হয়।কম্পিউটারে কমান্ড দেয়া থাকে সর্বচ্চ এক ঘন্টার জন্য। এই সময়এমবিপিএস (গতি) ঠিক থাকে। একঘন্টা পর অটো এমবিপিএস কমে যাবে। যা ইউজারদের প্রতারনা করা হচ্ছে। স্থানীয় সাবেক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ী ওয়ালিদ হাসান লিটন জানান- মাদার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে দামে ব্যান্ডউইথ কিনে সেই দামেই বিক্রি করতে হয়। ফলে কোনলাভ থাকেনা। লাভবান হতে হলে ১০০ ইউজারের জন্য কেনা ব্যন্ডউইথ ২শ জনের মধ্যে বিক্রি করতে হবে। তাতেই উজাররা চাহিদার গতি থেকে বঞ্চিত হয়। এই কারণে তিনি ইন্টারনেট ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।
গাংনী সরকারী ডিগ্রী কলেজের অনার্সের ছাত্র মাহমুদ হাসিব বলেন,ব্রডব্যান্ড লাইন থাকলেও গতি থাকেনা একারনে অনেক সময় মোবাইল ফোনের এমবি দিয়ে তথ্য প্রযুক্তির কাহ করতে হয়। ইন্টারনেট বিড়ম্বনার কারনে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থী সহ এর সাথে জড়িতরা।
গাংনী বেসরকারী একটি কিন্ডার গার্ডেনের প্রধান শিক্ষক জানান, করোনার কারনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা করা হলেও নেটে গতি না থাকর কারনে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। অভিযোগ দিলেও কর্তৃপক্ষ আমলে না নিয়ে লাইন কেটে দেওয়ার হুমকি দেয়। একারনে বাধ্য হয়ে তাদের হাতে জিম্মি থাকতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আইসিটিএক্সপার্ট বলেন- মাদার আইএসপি থেকে লোকাল আইএসপি ব্যবসায়ীরা ব্যান্ডউইথ কিনে ব্যবসা করছেন। অতিরিক্ত মুনাফা পেতে ব্যবসায়ীরা বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে নির্ধারিত‘র চেয়ে অতিরিক্ত ইউজারদের মধ্যে ব্যান্ড উইথ বন্টন করছে। ফলে ইউজাররা ইন্টারনেটে লো ব্যান্ডউইথ গতিপাচ্ছে। ফলে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নঅধরা থেকে যাচ্ছে।