গাংনী নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম :
স্বামী সাহাবুদ্দীন জীবিত থাকতেই গোলাম সারোয়ার সবুজের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন গাংনী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ফারহানা ইয়াসমিন। সাহাবুদ্দীন বিষয়টি অনুমান করতে পেরে কোন ভাবেই বিপদগামী পথ থেকে ফেরাতে পারেনি ফারহানাকে। পরোকিয়া প্রেমের কারনে সাহাবুদ্দীন ফারহানার সংসারে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো।
প্রতিবেশিরা জানায়,সাহাবুদ্দীনের মৃত্যু’র পর ফারহানার বাড়িতে যাতায়াতের কারনে মেহেরপুর সদর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের আনসারুল হকের ছেলে গোলাম সারোয়ার সবুজের প্রেমের বিষয়টি প্রকাশ্য আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে।
২৬.০৫.২০২০ ইং তারিখ মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় গাংনী পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের ফারহানার ভাড়া বাড়িতে তার প্রেমিক সবুজের সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ তুলে হট্টগোল শুরু করে স্থানীয়রা। পরে তাদের দুজনকে ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে গাংনী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এম এ খালেক ও পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম,গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: ওবাইদুর রহমান সহ প্রতিবেশিরা ফারহানার বাড়িতে ছুটে আসলে বিষয়টি ষড়যন্ত্র দাবি করে ফারহানা সকলকে বলেন গোলাম সারোয়ার সবুজ তার ছোট ভাই বিভিন্ন প্রয়োজনে সে তার বাড়িতে যাতায়াত করে তার সাথে কোন অনৈতিক সম্পর্ক নেই। পরে গোলাম সারোয়ার সবুজের ম্যাসেঞ্জার পরীক্ষা করে দুজনের কিছু অশ্লীল ছবি ও কথাবার্তা পাওয়া যায়।
কি কথাবার্তা ছিলো ম্যাসেঞ্জারে : ফারহানা ইয়াসমিন বলেন তুমি আমাকে কখনও ছেড়ে যাবেনা ওয়াদা করো। তখন গোলাম সারোয়ার সবুজ ফারহানাকে ছেড়ে না যাওয়ার অঙ্গিকার করেন। এসময় তিনি সবুজকে নিয়ে সুখে থাকতে চান বলে এসএমএস করেন ফারহানা।
তুমি আমাকে নিয়ে সুখি তো ফারহানা এমন প্রশ্ন করলে সবুজ সম্মতি প্রকাশ করেন। ঈদের পর তাদের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি সমাধান করার আকুতি জানান ফারহানা ইয়াসমিন। (এ ধরনের অসংখ্য এসএমএস ও ছবি এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে)। পরে দুজনের প্রেমের বিষয়টি প্রকাশ পেলে উভয়ের সম্মতিতে ২০ লাখ টাকা দেন মোহরে তাদের বিয়ে হয়। এসময় গাংনী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এম এ খালেক ও পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম,স্থানীয় কাউন্সিলর আছেল উদ্দীন,সবুজের পিতা আনসারুল হক,এক চাচা ও বুড়িপুতা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সানোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ফারহানা-সাহাবুদ্দীনের বিয়ে,রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধি হওয়া :
খুব ছোটকাল থেকেই সাহাবুদ্দীন করমদি গ্রাম থেকে গাংনী শহরে বিভিন্ন ছাত্রবাসে থেকে পড়ালেখা করেন। সেই ৯০ দশক থেকে গাংনীতে সে সচ্ছভাবমূর্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়। এরপর প্রায় ১৭ বছর পূর্বে ২০০৩ সালের দিকে করমদি গ্রামের আবু বক্করের ছেলে সাহাবুদ্দীনের সাথে পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয় দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা ফারহানা ইয়াসমিনের। বিয়ের বেশ কয়েক বছর পর সাহাবুদ্দীন দম্পত্তি সংসার পাতেন গাংনীতে। পরে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এম এ খালেকের হাত ধরে ফারহানা জড়িয়ে পড়েন গাংনীর রাজনীতিতে। প্রথম বারের মত জেলা পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচন করে যুব মহিলালীগের সভাপতি সাহানা ইসলাম শান্তনার কাছে পরাজিত হন। পরে গাংনী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে স্বামী সাহাবুদ্দীনের ক্লিন ইমেজকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া জীবন যাপন করতে থাকেন ফারহানা ইয়াসমিন। এতে বাধ সাধে স্বামী সাহাবুদ্দীন আহমেদ। সংসারে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। মৃত্যু’র শেষ প্রান্তে এসে মানষিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে সাহাবুদ্দীন। কিন্তু সুখে থাকা হলোনা হতভাগ্য সাহাবুদ্দীনের। সাদা মনের মানুষ সাহাবুদ্দীন আহমেদ গত ১০ ফেব্রুয়ারী সোমবার আকস্মিক মৃত্যু হয়। সে সময় রহস্য জনক মৃত্যু হয়েছে মর্মে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। সেসময় সাহাবুদ্দীনের পরিবার থেকে নানা অভিযোগ উত্থাপন করলেও অজ্ঞাত কারনে সবকিছুই থমকে যায়। প্রেমের সম্পর্কের জেরে বিয়ের সময় সেই মৃত্যু’র রহস্য নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে দিন ভর।
কে এই সবুজ : ২৫/১১/১৯৯৩ সালে জন্ম গোলাম সারোয়ার সবুজের। সে মেহেরপুর সদর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের আনসারুল হকের ছেলে।
একটি সূত্র জানিয়েছে,সবুজ তার খালাতো ভাইয়ের বৌকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে। এরপর সবুজের ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম হয়। তারপর সবুজ কিছুদিন যাবৎ মালয়েশিয়ায় থাকতো সেখানে একটি কোম্পানীর নামে একটি মামলা করে কিছু টাকা নিয়ে দেশে চলে আসেন। বাবার তেমন কোন জমি জমা না থকেলেও অন্য’র জমি নিয়ে চাষাবাদ করেন।
ফারহানা-সবুজের পারিবারিক ইতিহাস ও পরিচয় : গোলাম সারোয়ার সবুজের বাড়ি মেহেরপুর সদর উপজেলা হওয়ার সুবাদে সে বেশির ভাগ সময় মেহেরপুরেই থাকতো। আর রাজনীতি করার কারনে প্রায় সময়ই ফারহানা মেহেরপুরে যাতায়াত করতো। মেহেরপুরে যাতায়াতের সূত্র ধরেই দুজনের পরিচয় হয় বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। ফারজহানা ইয়াসমিনের ১৫ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। সবুজের সংসারে রয়েছে তার স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী ও ২ বছরের একটি ছেলে। সবুজ বেশ কয়েক বছর প্রবাসে থাকলেও দেশে ফিরে তেমন কিছু না করলেও মাঝে মধ্যে আম লিচুর বাগান ক্রয় করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো বলে জানায় সে। ১০ বছরের ছোট সবুজকে বিয়ে করলেন ফারহানা।
প্রয়াত সাহাবুদ্দীনের ছোট ভাই প্রবাসি আক্তার হোসেন মোবাইল ফোনে এম এ খালেকের কাছে দাবি করেন : ফারহানা তার ভাইকে প্রচন্ড মানসিক চাপে রাখতেন। এমনকি মৃত্যু’র ১৫ দিন আগে সাহাবুদ্দীনকে ডির্ভোজ দিয়েছে বলে ফারহানার মা সাহাবুদ্দীনকে জানিয়ে ছিলেন। তিনি দাবি করে ফারহানার সব আয় রোজগার তার ভাইকে না দিয়ে কিংবা সংসারের কাজে না লাগিয়ে প্রেমিক সবুজের কাছে দিতো। এমনকি প্রায় ৩ লাখ টাকা মূল্যে’র মটরসাইকেলও ফারহানা উপহার দিয়েছে।
সবুজের বক্তব্য : সবুজ জানান, ফারহানার সাথে তার সম্পর্ক ছিলো কিন্তু বিয়ে করতে হবে এমন সম্পর্ক তার সাথে ছিলনা। তার বাড়িতে ও বিভিন্ন স্থানে তাদের দেখা সাক্ষাত ও কথাবার্তা হতো। একটি এস এম এসের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সবুজ কোন উত্তর না দিয়ে গড়িমশি শুরু করেন।
০৫.০৯.১৯৮৪ সালে জন্ম ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিনের বক্তব্য : তিনি বলেন যা হচ্ছে বা হয়েছে সবই তো দেখছেন। সব কিছুই ষড়যন্ত্র। একটি চক্র তাকে সামাজিক ভাবে হেয় করতেই মিথ্য অপবাদ দিচ্ছে। যেহেতু বিয়ে হয়েছে কি আর বলার।
কনে পক্ষের উকিল পৌর মেয়র আশরাফুল জানান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়ের উপস্থিতিতে ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন তার প্রেমিক গোলাম সারোয়ার সবুজের সাথে ২০ লাখ টাকা দেন মোহরে তাদের বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। মেয়ে পক্ষের দুজন স্বাক্ষী হলেন কাউন্সিলর আছেল উদ্দীন ও শ্রমিক নেতা মনিরুল ইসলাম মনি।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: ওবাইদুর রহমান জানান, তিনি শুনেছেন ২০ লাখ টাকা দেন মোহরে ফারহানা ও সবুজের বিয়ে হয়েছে।
গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক জানান, ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন ও গোলাম সারোয়ার সবুজের মধ্যে দীর্ঘ দিনের প্রেমিক প্রেমিকার সম্পর্ক ছিলো। সম্পর্কের জেরে গোলাম সারোয়ার সবুজ প্রায় প্রতিনিয়ত ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিনের বাড়িতে যাতায়াত করতো। ঘটনার সময় দুজন একবাড়িতে রয়েছে মর্মে খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন হৈচৈ শুরু করে। পরে দুজন দুজনের ভালোবাসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের সম্মতিতে সামাজিক ভাবেই বিয়ে দেয়া হয়।
১ কমেন্ট
সামাজিকভাবে কিভাবে বিয়ে দেয়া হলো? ফারহানা বিধবা হলেও। সবুজের স্ত্রী সন্তান আছে। সেই স্ত্রীর সম্মতি না নিয়ে বা তার থেকে ডিভোর্স না নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা যেভাবে তাদের বিয়ে দিয়েছে সেটাই তো অনৈতিক। যা করেছে তারা সেজন্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ ছিল সঅবুজের আগের স্ত্রীর থেকে সম্মতি বা ডিভোর্স নেয়ার ব্যবস্থা করা।