ফারুক আহমেদ,গাংনী :
আদম ব্যাপারির খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়াতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ৬০ প্রবাসী। ভাগ্য অন্নেশনে ধারদেনা ও সহায়-সম্বল বিক্রি করে দালালের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ৫-৬ লাখ টাকা।
৩-৪ মাস আগে মালয়েশিয়া গেলেও কাজ দেওয়ার পরিবর্তে আটকে রাখা হয়েছে একটি বিদ্যুৎ বিহীন কক্ষে। খাবার ও পানি সংকটে অনাহারে অর্ধহারে চলছে তাদের মানবেতর জীবন। পরিবারের সচ্চলতা ফেরাতে একটু সুখের আশায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তারা।
গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের জহিরুলের পিতা ইসরাফিল আলম বলেন, তার ছেলে সহ নুরুজ্জামানের ছেলে শাহীন আলম,কাবেরের ছেলে রাজন আলী, মুরাদের ছেলে অলিল. আনারুলের ছেলে রেজাউল তাদের পরিবারের নিকট পাঠানো একটি ভিডিওতে কাজে যোগদান করানো ও বাঁচার আকুতি জানিয়ে বলেন, সাহেবনগর গ্রামের কেএনএসএইচ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান মাজেদ, সাহেবনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হাফিজুর রহমান,কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে ন্যাড়া, বালিয়াঘাট গ্রামের আনিসুল হক মাস্টারের ছেলে শোভন, সাহেবনগর গ্রামের সুরুজ ও তার ভাই আওয়াল-মুসা কলিমের মাধ্যমে ঢাকায় নাভিরা ও মুসাকলিম এন্টারপ্রাইজ এজেন্সির মাধ্যমে টাকা নিয়ে ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে।
গেল ৩-৪ মাসেও দালাল চক্রের সদস্যরা কোন কাজ দিতে পারেনি। তারা প্রথম দিকে খাবার ও পানি দিচ্ছিল। এখন তা বন্ধ করে দিয়েছে। খাবার চাইলে নানা ভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। মালয়েশিয়াতে পৌঁছানোর পর এজেন্সির লোকজন তাঁদের গাড়িতে করে একটি ভবনে নিয়ে পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছেন। এখন একটি বিদ্যুৎ বিহীন ঘরে আটক আছি। দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে পরিবার সহ আমরা সর্বশান্ত হয়ে গেছি। খাবার ও শৌচাগারের জন্য দুর পাহাড় থেকে পানি আনতে হচ্ছে। ঘরে আগে বিদ্যুৎ থাকলেও এখন তা কেটে দেওয়া হয়েছে। অন্ধকার ঘরে খাবার ও পানিয় জলের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমরা বাচঁতে চায়। দেশেবাসি, প্রশাসন ও পুলিশের প্রতি কাজ পাওয়া ও বাঁচার আকুতি জানিয়ে ব্যাবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
গাংনীর কাজিপুর গ্রামের প্রবাসী জহিরুলের পিতা ইসরাফিল আলম বলেন, ছেলেকে মালয়েশিয়া পাঠিয়ে আমরা এখন পথে বসেছি। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত ছেলের মানবেতর জীবনযাপন ও আহাজারীতে দেশে আমাদের পরিবারে এখন শোকের মাতম চলছে। সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের স্বাবলম্বি করার লক্ষ্যে জমি বন্ধক রেখে, সুদের উপরে টাকা নিয়ে, ঋণে করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে এখন সর্বশান্ত। পাওনাদাররা বাড়ির উপর এসে তাদের টাকার জন্য পিড়াপিড়ি করছে। ওদিকে ছেলের বাঁচার আকুতি। দালালরাও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সকলে গা ঢাকা দিয়েছে। দালালদের মোবাইল বন্ধ, বাড়িতে তালা ঝুলছে। আমরা এখন প্রশাসনের সহায়তা চাচ্ছি।
প্রবাসী রাশিদুলের স্ত্রী সাথীয়ারা খাতুন জানান, সামান্য জমি ছিলো বিক্রি করেছি, বাপের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে, এনজিও থেকে ঋণ করে স্বামীকে বিদেশ পাঠিয়েছি। সেখানে স্বামীকে কাজ না দিয়ে একটি কক্ষে আটক করে রেখেছে। খাবার-পানি না পেয়ে মানবেতর জীবন করছে। এখান টাকা পাঠালে কিছু খেতে পারে। আমরা এখন সহায় সম্বলহীন। কিভাবে টাকা পাঠাবো? তার উপরে পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। আমরা এখন দিশেহারা। সরকারের সহায়তা কামনা করছি।
কাজিপুর ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন জানান, দেশে ছেলেগুলো কাজ কর্ম করে কোন রকমে চলছিল। ভাগ্য ফেরাতে বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। চোখের নামনে পরিবারগুলোর কষ্ট, খুবই বেদনাদায়ক। আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করছি এর একটি সুষ্ঠ সমাধান করে দিতে।
এ ব্যাপারে দালাল চক্র সদস্যদের বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। এমনকি তাদের মুঠোফোন বন্ধ ও বাড়িঘর তালাবদ্ধ রয়েছে।
সাহেবনগর গ্রামের কেএনএসএইচ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম বলেন,লাইব্রেরিয়ান মাজেদ তিন দিনের ছুটি নিয়েছে পরে মেডিকেল ছুটির কাগজ পাঠিয়েছে।
এ বিষয়ে আদম ব্যবসায়ী সাহেবনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হাফিজুর রহমান বলেন, মুসা কলিমের মাধ্যমে ঢাকায় নাভিরা ও মুসাকলিম এন্টারপ্রাইজ এজেন্সির মাধ্যমে ১৫জনকে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছি। আশা করছি দ্রত কাজের ব্যবস্থা হবে। আর তা না হলে ভুক্তভুগী পরিবার গুলোকে সাথে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয়ে কথা বলার জন্য সাহেবনগর গ্রামের আদম ব্যবসায়ী সুরুজ ও তার ভাই আওয়ালের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে নাভিরা ও মুসাকলিম এন্টারপ্রাইজ এজেন্সির মালিক মানবপাচারের মুল হোতা মুসা কলিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, দালালদের খোঁজ খবর নেয়া ও অসহায় পরিবার গুলোকে আইনগত সহযোগিতা করা হবে। তাদের লিখিত আবেদন করতে বলা হয়েছে।