গাংনী নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম :
মেহেরপুরে তাহের ক্লিনিকে একেরপর এক রুগীর মৃত্যু ঘটনা ঘটলেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ভুল অপারেশনে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন রুগীর মৃত্যু হলেও অজ্ঞাত কারণে বারবারই পার পেয়ে যাচ্ছে ডাক্তার আবু তাহের। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষের উদাসিনতাকেই দায়ি করছে ভুক্তভুগী পরিবারের সদস্যরা। ভুক্তভুগীর পরিবার ও স্থানীয় ভাবে জানা গেছে, গতকাল ১৯ জুন বুধবার দুপুরে মেহেরপুরে অস্ত্রপচারের পরপরই হাফিজুর রহমান (৭৭) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে মেহেরপুর শহরের তাহের ক্লিনিকে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিহত হাফিজুর রহমানের বাড়ি গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামে। মৃত হাফিজুর রহমানের মেয়ে নিলুফা খাতুন জানান, অস্ত্রপচার শেষে আমার বাবাকে বেডে নিয়ে আসে। এর পরপরই তার মৃত্যু হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে দ্রুত নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স যোগে লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেন ক্লিনিক মালিক ডা. আবু তাহের। তাহের ক্লিনিকের মালিক ও জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু তাহের বলেন, নিহত হাফিজ উদ্দিনের কোন অস্ত্রপচার হয়নি। সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এক লক্ষ টাকায় বিষয়টি মীমাংসার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন। কোন টাকা দিয়ে মীমাংসা করা হয়নি। গত ৭ এপ্রিল মেহেরপুরে তাহের ক্লিনিকে আবারো ভুল চিকিৎসায় রিমা খাতুন ’’২০’’ এক গৃহবধুর মৃত্যু’র ঘটনা ঘটে। রিমা খাতুন গাংনী উপজেলার হিজলবাড়িয়া মোল্লাপাড়ার রফিকুল ইসলামের মেয়ে ও একই উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের রামদেবপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী। রিমা খাতুনের ফুফা ’’জামাই” মারুফুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, রিমার প্রসব বেদনা উঠলে মেহেরপুর তাহের ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। দুপুর ১২ টায় ক্লিনিক মালিক ডাক্তার আবু তাহের রিমার সিরিয়ান অপারেশন করান। অপারেশন থিয়েটার থেকে রিমা খাতুনকে বের করার পরপরই সে ছটফট করতে থাকে এরপর রাত সাড়ে ৮টায় সময় মারা যায় সে। তিনি আরো বলেন, রিমার ভুল অপারেশন করার কারনেই তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর পরই তড়িঘড়ি করে তাহের ক্লিনিকের নিজস্ব এ্যামবুলেন্সে রিমার লাশ বাড়িতে পৌছে দেয়া হয়। এসময় বিক্ষুদ্ধ জনতা ও স্থানীয় লোকজন এ্যামবুলেন্স সহ ড্রাইভারকে আটকিয়ে রাখে। ঐ ঘটনায় ডাক্তার আবু তাহেরে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হভে জানিয়েছিলেন মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার শামীম আরা নাজনীন। কিন্ত কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নী।
২০১৩ সালে গাংনী তাহের ক্লিনিক ২ এ মায়া খাতুন (৩৩) পিত্তথলিতে পাথর অপারেশনের পর তার মৃত্যু হয়। মায়া পিতা রেজাউল হক জানান, ডাক্তার আবু তাহেরের ভুল অপারেশনের কারনে তার মেয়ে মায়ার মৃত্যু হয়। তৎকালিন মেহেরপুরের সিভিল সার্জন মোঃ আব্দুস সহিদ কোন ব্যবস্থাই নেয়নী। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বুধবার তাহের ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় আব্দুল খালেক (৫০) নামের এক রোগী মারা যায়। ঐ ঘটনায় রোগীর স্বজন ও ক্ষুদ্ধ জনতা ক্লিনিক ভাংচুর করে । নিহত আব্দুল খালেক সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের মৃত হারান হাল সানার ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে পারিভন খাতুন অভিযোগ করে বলেছিলেন, ডা. তাহের নিজেই অজ্ঞান করা ইনজেকশন দিয়ে তার বাবাকে মেরে ফেলেছে। তৎকালিন মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. জিকেএম সামসুজ্জামান ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বললেও কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নী।
২০১২ গাংনী তাহের ক্লিনিক ২ ভুল অপারেশনে রাজিয়া খাতুন নামের এক প্রসুতির মৃত্যু হয়। সে গাংনী উপজেলার কশবা গ্রামের জাকারিয়া হোসেনের স্ত্রী। রাজিয়া খাতুনের স্বামী জাকারিয়া হোসেন জানিয়েছিলেন, “বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে অপারেশন করার পর নাড়ি সেলাই না করেই ডা. আবু তাহের আমার স্ত্রীর পেট সেলাই করেন। পরে পেটের ভেতর প্রচন্ড রক্ত ক্ষরণ হলে মূমূর্ষ হয়ে পড়েন আমার স্ত্রী। এটা বোঝার পর ডাক্তার দ্বিতীয়বার তার পেটের সেলাই কেটে নাড়ি সেলাই করেন। এ সময় তাকে ২ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরই তার মৃত্যু হয়।” ওই ডাক্তার অপারেশনের জন্য তাদের কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা নেন বলে তিনি জানান। প্রসূতি মায়ের মৃত্যু প্রসঙ্গে ডা. আবু তাহের জানিয়েছিলেন, “রোগী হার্টফেল করে মারা গেছে। এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে মেহেরপুরের সিভিল সার্জন শামীম আরা নাজনীনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।