গাংনী নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম :
চুয়াডাঙ্গায় চাল কান্ডের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তৌফিকুর রহমানের নেতৃত্বে ৩ সদস্য’র একটি টিম গাংনীতে এসে তদন্ত শুরু করেছে। গত সোমবার সকালে চুয়াডাঙ্গার সাতগাড়ীর এলাকার দুটি গোডাউন সিলগালা করে জেলা প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তৌফিকুর রহমান বলেন,প্রকল্প সভাপতি সহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য ও কাগজপত্র নেয়া হয়েছে। সেগুলো যাচাই বাছাই পূর্বক সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তদন্তে কোন অনিয়ম পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন তদন্ত চলছে এখনই এ বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন,মেহেরপুর ২ গাংনী আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকনের অনুকুলে ২০১৯/২০ অর্থ বছরে কাবিখার ১শ’৬০মে:টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দের অনুকুলে ১৩টি প্রকল্প গ্রহন করে অনুমোদনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হলে সেখান থেকে সরকারী ভাবে প্রকল্প গুলো অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর প্রকল্প সভাপতির অনুকুলে প্রথম কিস্তির ৫২.৫৫ মে:টন বরাদ্দ দেয়া হয়। উক্ত প্রকল্পের সভাপতিরা বরাদ্দে ৬০ ভাগ চাল বিক্রি করে হেয়ারিং বন্ডের ও বাকী ৪০ ভাগ চাল দিয়ে মাটির কাজ করবে। কাজের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত।
তিনি আরো বলেন,কোন প্রকল্পে অনিয়ম হলে তাৎক্ষনাক সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া কোন রাস্তা নিয়ে বিরোধ থাকলে সেই প্রকল্প বাতিল করে নতুন প্রকল্প গ্রহন করে বাস্তবায়ন করা হবে।
গাংনী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আয়েশা খাতুন বলেন,১৩ টি প্রকল্পের অধিনে প্রথম কিস্তির ৫২.৫৫ মে:টন বরাদ্দ হলেও ৮জন প্রকল্প সভাপতি ৩৭ মে:টন (১২৬৬ বস্তা) চালের ডিও ছাড় করা হয়েছে।
গাংনী খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো: মতিয়ার রহমান জানান, কাথুলী ইউপি সদস্য ভাবিরন নেছা ৩,মটমুড়া ইউপি সদস্য লাভলী খাতুন ৩.৫৫,মটমুড়া ইউপি সদস্য সাজাহান আলীর ৬,ধানখোলা ইউপি সদস্য বসির উদ্দীনের ৬,ধানখোলা ইউপি সদস্য জাফর আলীর ১, বামুন্দী ইউপি সদস্য জিয়ারুলের ৯,বামুন্দী ইউপি সদস্য নাজমিন ৬ ও বামুন্দী ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের নামে ৩টন, সহ মোট ৩৭.৫৫ টন চাল ছাড় করা হয়। সকল প্রকল্প সভাপতিরা চাল বুঝে নিয়েছেন।
তবে কয়েকজন প্রকল্প সভাপতির দাবি তারা শুধুমাত্র স্বাক্ষর করেছেন চাল কে বা কারা উত্তোলন করেছেন তারা জানেন না। একটি একটি সূত্র জানিয়েছেন কয়েকজন প্রকল্প সভাপতি সাংবাদিকদের কাছে চাল উত্তোলন করেননি বলে স্বীকার করলেও অজ্ঞাত কারনে শেষ পর্যন্ত উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন,সকল সংসদ সদস্য’র অনুকুলে কাবিখার চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দ অনুযায়ী প্রকল্প দেয়া হয়। সেগুলো বাস্তবায়ন করে প্রকল্প সভাপতিরা। আর প্রকল্প তদারকি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। সেক্ষেত্রে কোন কোন প্রকল্পের সভাপতি চাল উত্তোলন করেছে বা করেনি কিংবা কে অনিয়ম করেছে এটা দেখভাল করার দায়িত্ব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার। চুয়াডাঙ্গায় চাল কান্ডের সাথে তিনি কোন ভাবেই জড়িত নেই। রাজনৈতিক ভাবে হয়রানি করার জন্য অপপ্রচার করা হচ্ছে।
ধানখোলা ইউপি সদস্য বসির উদ্দীন বলেন প্রথম প্রকল্প সভাপতি হয়েছি তাই সব বিষয় জানিনা। এসব নিয়ে আর ঝামেলায় জড়াতে চাইনা। কাথুলী ইউপি সদস্য ভাবিরন নেছা বলেন,তদন্ত কমিটির কাছে সঠিক টাই বলেছি। গতকাল সাংবাদিকদের কাছে এক রকম আর তদন্ত কমটির কাছে অন্য রকম বলার কারন কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাইরে কখন কি যে বলছি তার ঠিক নেই। মটমুড়া ইউপি সদস্য সাজাহান আলীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গড়িমশি করেন।
তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে,তড়িঘড়ি করে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ ও চলমান রয়েছে। এসব কাজের মান নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তবে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়ে থাকলে বা কোন অনিয়মের অভিযোগ উঠলে প্রকল্প সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নিরঞ্জন চক্রবর্তী ।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মো: আতাউল গনী বলেন,তদন্ত কমিটি কার্যক্রম চলছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন থেকে গঠিত তদন্ত কমটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মনিরা পারভীন বলেন,প্রকল্প সভাপতি,চালক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িতদের বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় ডাকা হয়েছে। তাদের শুনানী গ্রহন করা হবে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
গাংনীর ভুমিমাল ব্যবসায়ী মায়হক বলেন,প্রকল্প সভাপতিদের নিকট থেকে চাল ক্রয় করা হয়। পরবর্তীতে চাল গুলো আলমডাঙ্গার অশোক ও গৌতম বাবুর কাছে বিক্রয় করা হয়। আলমডাঙ্গার চাল ব্যবসায়ী অশোক জানান,তিনি গাংনীর মায়হকের কাছ থেকে ২০ টন চাল ক্রয় করে চুয়াডাঙ্গা জনৈক্য নজরুলের কাছে বিক্রি করেছেন।
আলমডাঙ্গার চাল ব্যবসায়ী গৌতম জানান, চুয়াডাঙ্গার নজরুল তার বন্ধু হওয়ার কারনে তার গোডাউনে ১৭ টন চাল রাখা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার সাতগাড়ীর চাল ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন,চাল গুলো তার গোডাউনে রাখা হয়েছে। তবে তিনি চাল গুলো পছন্দ হলেই ক্রয় করবেন বলে আলমডাঙ্গার দুজন ব্যবসায়ীকে জানিয়েছে। পরবর্তীতে একটু ঝামেলা হওয়ার কারনে চাল সহ গোডাউন সিলগালা করে রাখা হয়েছে।
গোডাউন সিলগালা : চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সাদিকুর রহমান বলেন, চালের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হওয়ায় প্রকৃত তথ্য উৎঘটনের জন্য গোডাউন সিলগালা করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।