গাংনীতে স্বামীর যৌতুকের নির্মম বলি গৃহবধু নাসিমা

কর্তৃক farukgangni

ফারুক আহমেদ :

মেহেরপুরের গাংনীতে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার দুপুর ২ টায় ষোলটাকা ইউনিয়নের চেংগাড়া গ্রামের নিজ ঘর থেকে গৃহবধু নাসিমা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। যৌতুকের টাকা না পেয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ স্বজনদের। নিহত গৃহবধু নাসিমা খাতুন চেংগাড়া গ্রামের হারুন অর রশিদ বাবুর মেয়ে ও একই পাড়ার শাকিল আহমেদের স্ত্রী।
নাসিমা খাতুনের মা বিলকিছ খাতুন জানান,১ বছর পুর্বে চেংগাড়া গ্রামের শাকিলের সাথে তার মেয়ে নাসিমার বিয়ে হয়। বিয়ে হওয়ার পর থেকে যৌতুকের জন্য মেয়ের উপর অমানবিক নির্যাতন করে আসছিলো। যৌতুকের টাকা না পেয়ে ও শাকিলের পরোকিয়া প্রেমে বাধা দেওয়ার কারনেই তার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় ।
নিহতের স্বজনরা জানান, চেংগাড়া গ্রামের শাকিলের সাথে নাসিমা খাতুনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সম্পর্কের কারনে উভয় পরিবারের সম্মতিতে দুজনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর কিছুদিন সংসার ঠিকঠাক চললেও যৌতুকের হিসেবে পাখি ভ্যান ও নগদ টাকা দাবি করে শাকিল আহমেদ। পাখিভ্যান ও নগদ টাকা দিতে না পারার কারনে এ নিয়ে প্রায় প্রতিনিয়ন নির্যাতনের শিকার হতো স্ত্রী নাসিমা খাতুন।
নাসিমার বড় বোন নাসরিন জাহান জানান,সম্প্রতি চিৎলা নিত্যনন্দনপুর গ্রামের জনৈক্য এক মহিলার সাথে শাকিল প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঐ মহিলার কাছে অনৈতিক কর্মকান্ডের কারনে স্থানীয়রা শাকিলের ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করলে ধারদেনা করে জরিমানার টাকা পরিশোধ করলে সেখান থেকে মুক্ত হয় সে। তার পর থেকে আবারো সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হয়। গত তিন যাবৎ যৌতুকের জন্য চলে অমানবিক নির্যাতন। নির্যাতনের এক পর্যায় রবিবার সকালে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় নাসিমাকে।
স্থানীয়রা জানান,নাসিমা খাতুনরা তিন ভাই বোন আর তার মাকে নিয়ে তাদের সংসার। খুব ছোটকাল থেকে তাদের বাবা ছেড়ে চলে গেছে কোন খোঁজ খবর রাখেনা। তাদের বাবা জীবিত না মৃত তাও জানে না তারা। তাদের মা বিলকিছ খাতুন বিভিন্ন জনের বাড়িতে কাজ কর্মকরে সংসার চালতো। বর্তমানে সে চেংগাড়া বাজারে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করে কোন রকম জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। নিজের কোন জমি জমা না থাকায় অন্য’র বাড়িতে বসবাস করেন তারা। মেয়ের মৃত্যু’র শোকে পাগল প্রায় মা ভাই বোন সহ স্বজনরা।
প্রতিবেশিরা জানান, শাকিল আহমেদের বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা ঐ গ্রামের জনৈক্য আক্তার হোসেনের সাথে ২য় বিয়ে করে। তাদের সংসারে রয়েছে অভাব অনটন। শাকিলের মা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি রয়েছেন।
শাকিল ও নাসিমা পৃথক বাড়িতে বসবাস করে। শাকিল তেমন কোন কাজকর্ম না করার কারনে সংসারে অভাব অনটনের কারনে তাদের দুজনের মধ্যে প্রায় প্রতিনিয়ত ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। নাসিমা খাতুনের ঠিকমত তিনবেলা খাবারও জুটতো না। অনাহারে অর্ধাহারে থেকে মানবেতর স্বামীর নির্যাতন সইতে হতো।
গাংনী থানার ওসি মো: ওবাইদুর রহমান জানান,স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে নেয়া হয়েছে। পারিবারিক কোলহের জেরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে। তবে ময়না তদন্তের প্রতিবেদন আসলে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছানোর পূবেই নাসিমার স্বামী শাকিল পালিয়ে গেছে তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন

shares
error: Content is protected !!